নারায়ণগঞ্জ বাংলাদেশের একটি অতি পুরাতন ঐতিহ্যবাহী বন্দর নগরী। নগরীর মধ্যদিয়ে প্রবাহিত শীতলক্ষ্যা নদীর দু’তীরে গড়ে উঠা আরো বিভিন্ন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠানের কারণে ঢাকার পার্শ্ববর্তী ঘনবসতিপূর্ণ শিল্পসমৃদ্ধ এ বন্দর নগরীর গুরুত্ব কখনো কমেনি বরং পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ নগরীর গুরুত্ব বিবেচনায় ২০১১ সালে ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ এবং কদমরসুল ৩(তিন) টি পৌরসভা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা “নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন” প্রতিষ্ঠা করেন। সিটি কর্পোরেশনের মোট আয়তন ৭২.৪৩ বর্গ কিলোমিটার এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসুল অঞ্চল দু’টির আয়তন প্রায় ৫৫ বর্গ কিলোমিটার যা অনুন্নত এবং অনগ্রসর।
কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের জন্য একটি গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা। নারায়ণগঞ্জ শহর মূলত একটি শিল্প এলাকা। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে শিল্প বর্জ্য যেমন পলিথিন, কাপড় এবং কাগজপত্র তৈরী হয়। সিটির কঠিন বর্জ্যগুলির প্রধান উপাদানগুলিতে খাদ্য, শাকসবজি, ফল, পলিথিন, কাগজ এবং জুট কাপড় রয়েছে। এইগুলির মধ্যে, মেডিক্যাল বর্জ্য, খাদ্য ও শাকসবজি বর্জ্য শহরগুলির প্রধান উপাদান। এনসিসি এলাকায় সন্নিবেশিত বর্জ্যগুলি নিম্নলিখিত উপায়ে গৃহহীন বর্জ্য, সিটি বর্জ্য , বাণিজ্যিক ও অ-বিপজ্জনক শিল্প বর্জ্য, বিপজ্জনক (বিষাক্ত) শিল্প বর্জ্য, মেডিক্যাল বর্জ্য, মানব ও প্রাণী বর্জ্য, নির্মাণ বর্জ্য, ভূগর্স্থ বর্জ্য, প্রভৃতি।
(প্রকল্প স্থান)
নারায়ণগঞ্জ নগরীতে প্রায় ৩৫০ টন কঠিন বর্জ্য তৈরী হয়, তম্মধ্যে শিল্প বর্জ্য, আবাসিক বর্জ্য যেমন, খাদ্য, শাকসবজি, ফল, পলিথিন, কাগজ এবং কাপড়ের মতো । সিটি কর্পোরেশন প্রতিদিন প্রায় ২৯০ টন কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম। বর্জ্য সংগ্রহের হার এক দিনের মধ্যে প্রায় ৮৩% এবং অবশিষ্টাংশ স্থানীয় নদীর পাড়ে বা খালের উপর ডাম্প করা হয় যা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে পরিবেশের অবক্ষয় ও জনস্বাস্থ্যর জন্য গুরুতর ক্ষতির কারণ হয়। এনসিসির অপরিশোধিত পদ্বতিতে বর্জ্য ডাম্পিং করে এর ফলে, পরিবেশগত বিপদ এবং স্বাস্থ্যের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। কমিউনিটির আবাসিক বর্জ্য এবং বাণিজ্যিক ও মেডিক্যাল বর্জ্যগুলি রাস্তার পাশে, পুকুর, খাল ইত্যাদি স্থানে ফেলা হয়। কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণ ব্যবস্থাপনা এতই অপ্রতুল যাহার কারণে নগরীতে দূষণ ও স্বাস্থের ঝুঁকি বাড়ায়। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের জন্য এই প্রকল্প গ্রহণের ফলে নগরী দুষণমুক্ত হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে,
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন বিষয়টি খুবই গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করতঃ গত ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে কদমরসুল অঞ্চলের মধ্যবর্তী ২৫নং ওয়ার্ডে ধামগড় ও লক্ষণখোলা মৌজার নিরিবিলি এলাকায় ৬৯.৮৭ একর জায়গা অধিগ্রহণের প্রস্তাব করে। এ লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন গত ২১-০৭-২০২০ তারিখে “নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কদমরসুল অঞ্চলে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্প” প্রস্তাব (DPP) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সদয় অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করে। যার প্রস্তাবিত প্রকল্প ব্যয় ৩০১ কোটি ৩৫ লক্ষ ২১ হাজার টাকা। গত ২০-১০-২০২০ তারিখে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় শতভাগ সরকারী ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। এ কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও নগরবাসীর পক্ষ থেকে জানাচ্ছি আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা।
উক্ত প্রকল্পের মেয়াদকাল ১ জুলাই ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২৩ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পের কাজের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ৬৯.৮৭ একর, কার ওয়াশিং সেড নির্মাণ ২২৫০ বর্গমিটার, রাস্তা নির্মাণ কাজ ৫৫০ মিটার, বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ ২৬০০ মিটার, ভূমি উন্নয়ন ৪৪৬৭৯৪.৬৮ ঘনমিটার, প্রকৌশল সরঞ্জাম ক্রয় ১৬টি তৎমধ্যে স্কিভ স্টিয়ার লোডার ৫টি, চেইন ডোজার (১৯ টন) ১টি, পে-লোডার (২.৫ ঘনমিটার) ২টি, লোবেড (২০-২৫ টন) ১টি, ওয়েব্রিজ (২৫ টন) ১টি, স্ক্যাভেটর (২০-২৫ টন) ১টি, গার্বেজ ট্রাক (৫ টন) ৫টি, মোটর সাইকেল ৬টি, ভ্যান ও ট্রলি ২০০টি এবং সম্পূর্ণ প্রকল্প এলাকায় সড়কবাতি স্থাপন অন্তর্ভুক্ত আছে।
প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে স্যানিটারী ল্যান্ডফিল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে সম্পদের সু-ব্যবহার, সহজ ও কার্যকরভাবে কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াকরণ, দূষণ কমিয়ে পরিবেশের উন্নয়ন, নগরীর স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিতকরণ সহ আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। এছাড়া কদমরসুল অঞ্চলসহ নগরীর স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত হবে।
পূরণকৃত নমুনা ফরমঃ